তামিম ইকবাল: ১৭ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শেষ অধ্যায়

তামিম ইকবাল: ১৭ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শেষ অধ্যায়
বিশেষ প্রতিবেদক
হারারেতে শুরু, মিরপুরে শেষ। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে এক উজ্জ্বল অধ্যায় সমাপ্ত করলেন তামিম ইকবাল। ২০০৭ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে মাত্র ৮ বলে ৫ রানের ইনিংস দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছিল তাঁর। ২০২৩ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৫৮ বলে ৪৪ রানের ইনিংস দিয়ে মিরপুরে শেষ হলো এই কিংবদন্তির দীর্ঘ পথচলা।১৭ বছরের এই দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তামিম খেলেছেন ৪৫২টি আন্তর্জাতিক ইনিংস। সংগ্রহ করেছেন ১৫,২৫৪ রান। এ দেশের ক্রিকেট ইতিহাস বদলে দেওয়া অসংখ্য ইনিংসের সাক্ষী হয়েছেন তামিম। ২২ বার ম্যাচসেরা এবং ৭ বার সিরিজসেরা হয়েছেন এই বাঁহাতি ওপেনার। তবে অনেক ইনিংস রয়েছে যা হয়তো কখনো পুরস্কার পায়নি, কিন্তু ভক্তদের হৃদয়ে চিরস্থায়ী হয়ে আছে।২০২১ সালে প্রথম আলোর প্রধান ক্রীড়া সম্পাদক উৎপল শুভ্রকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তামিম তাঁর সেরা ৫টি টেস্ট এবং ওয়ানডে ইনিংস বেছে নিয়েছিলেন।
সেরা টেস্ট ইনিংস
১. ইংল্যান্ডের বিপক্ষে (২০১৬, মিরপুর)
ঢাকার মিরপুরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২০১৬ সালের সেই সেঞ্চুরি (১০৪ রান) ছিল তামিমের দৃষ্টিতে সবচেয়ে মূল্যবান। কঠিন কন্ডিশনে, যেখানে ব্যাটিং ছিল প্রায় অসম্ভব, সেখানে এই ইনিংস বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত করেছিল।
২. অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে (২০১৭, মিরপুর)
সেই ঐতিহাসিক টেস্টে তামিম দুই ইনিংসে ৭১ এবং ৭৮ রান করেছিলেন। অত্যন্ত কঠিন কন্ডিশনে এই ইনিংস দুটি জয়ের বড় অংশীদার ছিল।
৩. ইংল্যান্ডের বিপক্ষে (২০১০, ওল্ড ট্রাফোর্ড)
১০৮ রানের সেই ইনিংস ছিল বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসের অন্যতম সেরা পারফরম্যান্স।
৪. অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে (২০১৭, মিরপুর)
দ্বিতীয় ইনিংসের ৭৮ রান ছিল তাঁর ক্যারিয়ারের আরেকটি উজ্জ্বল মাইলফলক।
৫. ইংল্যান্ডের বিপক্ষে (২০১০, লর্ডস)
লর্ডসের ঐতিহাসিক মাঠে ১০৩ রানের ইনিংস তামিমের ক্যারিয়ারে এক অনন্য অর্জন।
সেরা ওয়ানডে ইনিংস
১. ইংল্যান্ডের বিপক্ষে (২০১০, মিরপুর)
১২৫ রানের ইনিংসটিকে তামিম নিজের প্রিয় বলে উল্লেখ করেছেন। এই ইনিংস তাঁর মতে “পারফেক্ট ব্যাটিংয়ের” উদাহরণ।
২. পাকিস্তানের বিপক্ষে (২০১৫, ঢাকা)
বিশ্বকাপের পর পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ জয়ে ১৩২ এবং অপরাজিত ১১৬ রানের দুই ইনিংস ছিল দুর্দান্ত।
৩. ইংল্যান্ডের বিপক্ষে (২০১৭, চ্যাম্পিয়নস ট্রফি)
ওভালে ১২৮ রানের ইনিংসটি ছিল বিশ্বমঞ্চে তামিমের সেরা পারফরম্যান্স।
৪. জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে (২০০৯, বুলাওয়ে)
১৫৪ রানের ইনিংসে তামিম সেদিন অসম্ভবকে সম্ভব করেছিলেন, ৩১২ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জয় এনে দিয়েছিলেন বাংলাদেশকে।
৫. ভারতের বিপক্ষে (২০০৭, বিশ্বকাপ)
পোর্ট অব স্পেনে ভারতের বিপক্ষে তাঁর সাহসী ৫১ রানের ইনিংস ছিল বাংলাদেশ ক্রিকেটের নতুন দিনের সূচনা।তামিম ইকবাল কেবল একজন ক্রিকেটার নন, তিনি বাংলাদেশের ক্রিকেটের অন্যতম রূপকার। তাঁর অসাধারণ ব্যাটিং, সাহসী নেতৃত্ব, আর অবিস্মরণীয় ইনিংসগুলো তাঁকে ভক্তদের মনে অমর করে রেখেছে। ক্রিকেট বিশ্বে বাংলাদেশের পরিচিতি বাড়ানোর পেছনে তামিমের অবদান অনস্বীকার্য।