তালেবানের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াচ্ছে ভারত: বৈঠকে নতুন ভূরাজনৈতিক ইঙ্গিত

সময়: 4:27 am - January 13, 2025 | | পঠিত হয়েছে: 154 বার

তালেবানের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াচ্ছে ভারত: বৈঠকে নতুন ভূরাজনৈতিক ইঙ্গিত

বিশেষ প্রতিবেদক

সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে আফগানিস্তানের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি এবং ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই বৈঠক তালেবানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক জোরদার করার এক নতুন অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।তালেবান ২০২১ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর ভারত সতর্ক পদক্ষেপে সম্পর্ক এগিয়ে নিয়েছে। তবে এবার মুত্তাকি-মিশ্রি বৈঠককে সবচেয়ে উচ্চপর্যায়ের যোগাযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে। আফগানিস্তানে ভারত ২০ বছরের বেশি সময় ধরে ৩ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি বিনিয়োগ করেছে। এই বৈঠকে আলোচ্য বিষয় ছিল আঞ্চলিক উন্নয়ন, বাণিজ্য, স্বাস্থ্য ও শরণার্থী খাতে সহায়তা, এবং উন্নয়ন প্রকল্প।ভারতের মুম্বাইয়ে তালেবান সরকার ইকরামুদ্দিন কামিলকে কূটনৈতিক প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। কামিল একসময় ভারতে পড়ালেখা করেছেন। এটি তালেবানের পক্ষ থেকে ভারতে নিযুক্ত প্রথম কূটনৈতিক প্রতিনিধি।এই বৈঠকের কয়েক দিন আগে পাকিস্তান আফগানিস্তানে বিমান হামলা চালায়, যা ভারত নিন্দা জানায়। পাকিস্তানের সঙ্গে সাম্প্রতিক সংঘর্ষ এবং আঞ্চলিক সমীকরণে ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য তালেবান ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়াতে চায় বলে মনে করা হচ্ছে।অন্যদিকে, ভারতও তালেবানকে এড়িয়ে চলার কৌশল থেকে সরে এসে বাস্তবতাকে গ্রহণ করার পথে হাঁটছে। ভারতের পররাষ্ট্রনীতি বিশ্লেষক রাঘব শর্মার মতে, “তালেবান ভারতের জন্য একটি বাস্তবতা। আফগানিস্তানকে উপেক্ষা করা ভারতের জন্য কোনো বিকল্প হতে পারে না।”বিশ্লেষকদের মতে, এই বৈঠকের মাধ্যমে আফগান নাগরিকদের জন্য ভারতের ভিসা চালু করার পথ সুগম হতে পারে। বাণিজ্য, স্বাস্থ্যসেবা এবং শিক্ষাখাতে ভারতে আফগানদের আগমন সহজ হলে উভয় দেশের পারস্পরিক সম্পর্ক আরও মজবুত হবে।কবির তানিজা, অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক, বলেন, “তালেবানের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন ভারতের সুদূরপ্রসারী কৌশল। ভিসা চালু করা হলে তা উভয় দেশের জন্যই ইতিবাচক হবে।”বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, তালেবানের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারত একদিকে সতর্ক, অন্যদিকে তাদের প্রতি ঘনিষ্ঠতা তৈরি করতে চাইছে। আফগানিস্তানে নারীদের শিক্ষা ও মানবাধিকার ইস্যুতে ভারত কোনো মন্তব্য না করলেও, তালেবানের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখাকে প্রয়োজনীয় মনে করছে।ভারত দীর্ঘদিন ধরে আফগানিস্তানে তার অবস্থান শক্ত রাখতে চাইলেও, তালেবানের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে গতি আনার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। শর্মা বলেন, “ভারতের কৌশলগত অবস্থানে পরিবর্তন দরকার। তালেবানের সঙ্গে সম্পর্ক আরও গভীর করা হলে আঞ্চলিক ভূরাজনীতিতে ভারসাম্য রক্ষা করা সহজ হবে।”দুবাইয়ে এই বৈঠক শুধু দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কই নয়, বরং দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক সমীকরণে নতুন মাত্রা যোগ করেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর