বিএবির চাঁদা তোলার ধারা অব্যাহত, ক্ষুব্ধ ব্যাংকাররা

বিএবির চাঁদা তোলার ধারা অব্যাহত, ক্ষুব্ধ ব্যাংকাররা
বিশেষ প্রতিবেদক
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) আবারো ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে চাঁদা তোলার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। সম্প্রতি সংগঠনটি প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণভান্ডারে কম্বল সরবরাহ ও ঢাকা আন্তর্জাতিক ম্যারাথনের জন্য ৪ কোটি টাকার চাঁদা চেয়ে ব্যাংকগুলোকে চিঠি পাঠিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বিস্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীরা।ছয়টি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী নিশ্চিত করেছেন যে, বিএবি এই চাঁদা তোলার জন্য চিঠি পাঠিয়েছে। ব্যাংক কর্মকর্তারা অভিযোগ করেছেন, এই ধরনের কার্যক্রম ব্যাংকের সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিল (CSR) কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করছে।একজন শীর্ষ ব্যাংক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “গত ১৫ বছরে প্রায় আড়াই শ কোটি টাকা চাঁদা দিয়েছি। সরকার বদলের পর আবার কম্বল কেনার চিঠি পেয়েছি। এবারও ম্যারাথনের জন্য চাঁদা চেয়ে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই চাঁদা তোলার ধারা চললে আমাদের CSR কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”২০০৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত টানা ১৭ বছর বিএবির নেতৃত্বে ছিলেন এক্সিম ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার। এ সময়ে ব্যাংকগুলো থেকে বিভিন্ন ইস্যুতে বিপুল পরিমাণ চাঁদা সংগ্রহ করা হয়। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর তাঁর নেতৃত্বাধীন কমিটি ও অন্যান্য শীর্ষ সদস্যরা দায়িত্ব হারান।নজরুল ইসলাম মজুমদারের সময় বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। বিশেষ করে চাঁদা তোলার মাধ্যমে সরকার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর কিছু নিয়ম-নীতির ছাড় আদায়ের অভিযোগ রয়েছে।গত সেপ্টেম্বরে বিএবির নতুন কমিটি গঠন করা হলেও চাঁদা তোলার ক্ষেত্রে পুরোনো ধারা বজায় রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ব্যাংক কর্মকর্তারা। নতুন কমিটির চেয়ারম্যান ঢাকা ব্যাংকের আবদুল হাই সরকার এবং ভাইস চেয়ারম্যান ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের মোহাম্মদ আবদুল মান্নান ও ব্যাংক এশিয়ার রোমো রউফ চৌধুরী।এ বিষয়ে এক ব্যাংক চেয়ারম্যান বলেন, “বিএবি আগে যেভাবে চলেছে, নতুন কমিটিও সেই ধারা থেকে বের হতে পারেনি। বরং আগের মতোই চাঁদা তোলা হচ্ছে, যা ব্যাংকিং খাতের স্থিতিশীলতার জন্য ক্ষতিকর।”বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ মোস্তফা কে মুজেরী বলেন, “বিএবি অতীতে চাঁদাবাজি করে ব্যাংকিং খাতকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। নতুন কমিটিও একই পথে হাঁটছে। জনগণের আমানত নিয়ে ছিনিমিনি খেলা বন্ধ করা উচিত। CSR তহবিল সুনির্দিষ্ট সামাজিক উন্নয়ন কার্যক্রমে খরচ হওয়া উচিত।”ম্যারাথনের জন্য সর্বনিম্ন ৫ লাখ টাকা চাঁদা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া প্রতিটি ব্যাংককে কমপক্ষে ১,২০০ গ্রাম ওজনের নির্ধারিত সংখ্যক কম্বল সরবরাহ করতে বলা হয়েছে।বিএবির চাঁদা তোলার এই ধারাবাহিকতা ব্যাংক খাতে অস্বস্তি তৈরি করেছে। ব্যাংকারদের মতে, এই চাঁদা তোলার প্রক্রিয়া CSR কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করছে এবং ব্যাংকিং খাতের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।