১৫ বছরে ঋণ বেড়েছে সাড়ে ১৫ লাখ কোটি টাকা,তিন বছরে দ্বিগুণ বিদেশি ঋণ নিয়েছে আ.লীগ সরকার

১৫ বছরে ঋণ বেড়েছে সাড়ে ১৫ লাখ কোটি টাকা,তিন বছরে দ্বিগুণ বিদেশি ঋণ নিয়েছে আ.লীগ সরকার
বাংলাদেশে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে গত ১৫ বছরে দেশের মোট দেশি-বিদেশি ঋণের স্থিতি ২ লাখ ৭৬ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ লাখ ৩২ হাজার ২৮২ কোটি টাকায়। অর্থাৎ, তাদের শাসনামলে ঋণ বেড়েছে সাড়ে ১৫ লাখ কোটি টাকা।অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের প্রকাশিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শেষ ত্রৈমাসিক বুলেটিন অনুযায়ী, গত অর্থবছরের ৩০ জুন পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ যথাক্রমে ১০ লাখ ২০ হাজার ২০৫ কোটি এবং ৮ লাখ ১২ হাজার ৭৭ কোটি টাকা।বিশ্লেষকরা মনে করেন, সরকারের রাজস্ব আহরণে ব্যর্থতা এবং বাজেট ঘাটতি পূরণে অতিরিক্ত ঋণনির্ভরতা ঋণ বৃদ্ধির প্রধান কারণ। বিশেষ করে, শেষ তিন বছরে ৬ লাখ ৮৭ হাজার ৯৮৬ কোটি টাকার ঋণ বৃদ্ধি সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় চাপ সৃষ্টি করেছে।সিপিডির সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “ঋণ ব্যবস্থাপনায় দক্ষতার অভাব এবং বৈদেশিক ঋণের ক্ষেত্রে দর-কষাকষির অভাবে সরকারের দায়দেনা বেড়েছে। ফলে ঋণের সুদ পরিশোধ এবং আসল ফেরত দেওয়ার চাপ জনগণের ওপর পড়ে যাচ্ছে।”সরকার বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (ADB), এবং জাপান, চীন, ভারতের মতো দেশ থেকে প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং বাজেট সহায়তার জন্য বৈদেশিক ঋণ নিয়েছে। তবে দর-কষাকষির অভাবে উচ্চ সুদে ঋণ নেওয়া হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বৈদেশিক ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ১২ হাজার ৭৭ কোটি টাকায়, যা তিন বছরের ব্যবধানে প্রায় দ্বিগুণ।২০২৪ সালের জুন শেষে অভ্যন্তরীণ ঋণের স্থিতি প্রথমবারের মতো ১০ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। সঞ্চয়পত্র, প্রভিডেন্ট ফান্ড, এবং ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নেওয়া হয়েছে। ব্যাংক খাত থেকে নেওয়া ঋণ ছিল ৮৯ হাজার ১০০ কোটি টাকা।২০২৩-২৪ অর্থবছরে ঋণের সুদ পরিশোধে সরকারকে ১ লাখ ১১ হাজার ৮২৪ কোটি টাকা ব্যয় করতে হয়েছে। এই ব্যয় চলতি অর্থবছরের শিক্ষা বাজেটকেও ছাড়িয়ে গেছে।২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ঋণ-জিডিপির অনুপাত দাঁড়িয়েছে ৩৬.৩০ শতাংশে, যা ২০২১ সালের ৩২.৪১ শতাংশের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF) ৫৫ শতাংশ পর্যন্ত গ্রহণযোগ্য মনে করে, তবে দেশের কর-জিডিপি হার মাত্র ৮.২ শতাংশ এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অর্ধেকে নেমে আসায় এই অনুপাত বাংলাদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।বিশ্লেষকরা মনে করেন, ঋণ ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা আনতে না পারলে দেশের আর্থিক ব্যবস্থা আরও সংকটে পড়তে পারে। মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, “ভবিষ্যতে ঋণের অর্থ সঠিকভাবে ব্যবহার এবং দুর্নীতি রোধ করতে না পারলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। ঋণ ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা আনতে হবে এবং দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক পরিকল্পনা করতে হবে।”