বিএনপিতে শৃঙ্খলা রক্ষায় জিরো টলারেন্স

সময়: 7:21 am - August 22, 2024 | | পঠিত হয়েছে: 53 বার

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে যান। এরপর সারা দেশে বিচ্ছিন্নভাবে শুরু হয় সহিংস কর্মকাণ্ড। এতে জড়িত থাকা ও সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনগুলো তাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া অব্যাহত রেখেছে। একই সঙ্গে নৈরাজ্য প্রতিরোধ করে জনমনে স্বস্তি ফেরাতে তৎপরতা চালাচ্ছে বিএনপি। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে জনগণের বিশ্বাস এবং ভালোবাসা অর্জন করতে কাজ করছে। পাশাপাশি ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহতদের পরিবারকে সহায়তা  ও আহতদের সুচিকিৎসার জন্য কাজ করছে।

অভ্যুত্থানের পর গত ১৫ দিনে বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের শতাধিক নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এছাড়া কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) ও পদ স্থগিত করা হয়েছে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীর। এই তালিকায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা থেকে শুরু করে মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীরা রয়েছেন। কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে। বেফাঁস বক্তব্য দেওয়ায় দলের অন্যতম নেতা চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুকে পদাবনত করে উপদেষ্টা থেকে সদস্য করা হয়েছে। ফরিদপুরের নগরকান্দায় আধিপত্য বিস্তারে সংঘর্ষের ঘটনায় এক জন নিহত হওয়ার পর বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ও কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুলের পদ স্থগিত করা হয়েছে।

দলের কান্ডারি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কড়া নির্দেশ অনুযায়ী শৃঙ্খলা রক্ষায় জিরো টলারেন্স দেখাচ্ছে বিএনপি। তারেক রহমান বলেছেন, কেউ বিএনপির নাম ব্যবহার করে কোনো অপকর্ম করতে চাইলে তাকে ধরে আইনের হাতে তুলে দিন। গির্জা, মন্দির, প্যাগোডার নিরাপত্তা দিন। ধর্ম-বর্ণ-বিশ্বাস দিয়ে মানুষকে মাপা যাবে না। একজন ব্যক্তির পরিচয় তিনি মানুষ। আপনার পাড়া-প্রতিবেশী যেখানেই কেউ এমন কিছু করার চেষ্টা করবে বন্ধু হিসেবে তার নিরাপত্তায় আপনি ঢাল হিসেবে দাঁড়িয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন। আমাদের মনে রাখতে হবে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে বসবাসকারী সবার একটিই পরিচয় আমরা বাংলাদেশি।

তারেক রহমান বলেছেন, আপনারা পরাজিত অপশক্তির পাতা ফাঁদে পা দেবেন না। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানকে চূড়ান্ত সফলতায় নিতে হলে কেউ দখলদারিত্বে লিপ্ত হবেন না, দখলদারিত্বে সহায়তা করবেন না। কেউ আইন নিজেদের হাতে তুলে নেবেন না।

এদিকে নানা অপকর্মে জড়িতরা বেশির ভাগই ‘অনুপ্রবেশকারী’ বলে দাবি বিএনপি নেতাদের। তাদের মতে, দলের কোনো পদ-পদবিতে নেই। ছিলেন না কোনো কর্মসূচিতে। আন্দোলন-সংগ্রামেও দেখা যায়নি বিগত দিনে। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে তারাই এখন বিএনপির ‘নেতাকর্মী’ সেজে গেছেন। দাপট দেখাতে শুরু করেছেন নিজ নিজ এলাকায়। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর দখল, চাঁদাবাজি আর অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছেন অনেকে।

এ পরিস্থিতিতে ‘অনুপ্রবেশকারী’ কথিত নেতাকর্মীর বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্তও রয়েছে। পাড়া-মহল্লায় প্রতিরোধ কমিটি গঠন করা হয়েছে। রাজধানীসহ কয়েকটি জেলায় দখল করা বাড়ি, দোকান, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতারা দখলমুক্ত করে প্রকৃত মালিককে বুঝিয়ে দিয়েছেন—এমন ঘটনাও অনেক রয়েছে।

গত কয়েক দিনে বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের শতাধিক নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে যুবদলের প্রায় ৬০, ছাত্রদলের ১০, বিএনপির ১৫ ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কয়েক জন রয়েছেন।

এছাড়া তিন জেলায় বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। শাস্তি পাওয়া নেতাদের মধ্যে অধিকাংশই হচ্ছেন—ঢাকা মহানগর, বগুড়া, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বরিশাল, পঞ্চগড়, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, নরসিংদী, নোয়াখালী, ঝিনাইদহ, লালমনিরহাট ও লক্ষ্মীপুর জেলার। ছাড় দেওয়া হচ্ছে না কেন্দ্রীয় নেতাদেরও। গত রোববার বিএনপির বরিশাল বিভাগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিনের দলীয় পদ স্থগিত করা হয়েছে। শৃঙ্খলা পরিপন্থি কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে বৃহস্পতিবার হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবুল হাশিমকে বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়।

দলের একজন নেতা জানান, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর রাজধানীর মোহাম্মদপুরে আলোচিত-সমালোচিত সাদিক এগ্রোর জায়গায় বিএনপির সাইনবোর্ড ব্যবহার করে একটি মহল দখলের চেষ্টা করে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নজরে আসার পর তাত্ক্ষণিকভাবে ঢাকা মহানগর উত্তরের নেতাদের কড়া নির্দেশ দেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্যসচিব আমিনুল হক ওই এলাকায় ছুটে যান। সেখানে খালের জায়গায় গড়ে তোলা রাজনৈতিক কার্যালয়টি দেখে তা ভেঙে ফেলেন। এছাড়া আরেকটি হাউজিংয়ের দখলে স্থানীয় নেতা মনোয়ার হোসেন জীবন ওরফে লেদু হাসান এবং তেরে নাম বাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়ার পর তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেন।

যে কোনো অনিয়মের বিষয়ে দলের অবস্থান প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান বলেন, দেশের অনিয়ম দূর করতে আন্দোলন করেছি। দলের কেউ যদি কোনো অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকে তা বরদাশত করা হবে না।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, দলের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে এরই মধ্যে নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বিএনপির ওয়ার্ড থেকে জাতীয় পর্যায় এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের ওয়ার্ড থেকে কেন্দ্রীয় কমিটি পর্যন্ত কোনো স্তরেরই কমিটিতে অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী বা অরাজনৈতিক ব্যক্তিকে যোগদান করানো যাবে না।

এদিকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহতদের পরিবারকে সহায়তা-পুনর্বাসন এবং আহত ছাত্র-জনতাকে অব্যাহতভাবে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সারা দেশে বিভিন্ন স্থানে দলের নেতারা গিয়ে এই সহায়তা কর্মকাণ্ডে অংশ নিচ্ছেন।

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর