সংরক্ষিত বনের মধ্য দিয়ে রেলপথ, পরিবেশ ধ্বংসের শিকার কক্সবাজার প্রকল্প

সংরক্ষিত বনের মধ্য দিয়ে রেলপথ, পরিবেশ ধ্বংসের শিকার কক্সবাজার প্রকল্প
বিশেষ প্রতিবেদক
চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নতুন রেলপথ নির্মাণে পদে পদে পরিবেশের ক্ষতি হয়েছে। সংরক্ষিত বনের ভেতর দিয়ে এই রেলপথ নির্মাণ করতে গিয়ে কাটা পড়েছে প্রায় ২ লাখ ৩৯ হাজার গাছ। এ প্রকল্পে বিপন্নপ্রায় এশিয়ান হাতির চলাচলের পথে বাধা সৃষ্টি হয়েছে, যার ফলে একটি বাচ্চা হাতি ট্রেনের ধাক্কায় মারা গেছে।সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে সংরক্ষিত বনের তালিকা থেকে ২০৭ একর জমি বাদ দিয়ে রেলপথ নির্মাণ করা হয়। চুনতি, ফাঁসিয়াখালী, এবং মেধাকচ্ছপিয়া সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ভেতর দিয়ে নির্মিত ১০৩ কিলোমিটার দীর্ঘ রেললাইনের ২৭ কিলোমিটার সংরক্ষিত এলাকায় পড়েছে।পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় রেলওয়ের জন্য চারটি শর্ত বেঁধে দিলেও সেগুলো বাস্তবায়নে গাফিলতি করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। শর্তগুলো ছিল:
- গাছপালার ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১০ কোটি ৮৭ লাখ টাকা পরিশোধ।
- পরিবেশের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে তিন গুণ গাছ রোপণ।
- বন্য প্রাণীর চলাচলে ওভারপাস ও আন্ডারপাস নির্মাণ।
- রেললাইনে শব্দ কমাতে সাউন্ড ব্যারিয়ার স্থাপন।
বন বিভাগের দেওয়া শর্তে দুটি ওভারপাস নির্মাণের কথা থাকলেও একটি মাত্র ওভারপাস তৈরি হয়েছে। নির্মাণ করা দুটি আন্ডারপাসের একটি দিয়ে হাতি চলাচল করতে পারছে না। এছাড়া সাউন্ড ব্যারিয়ার নির্মাণও করা হয়নি। তিন গুণ গাছ রোপণের প্রতিশ্রুতি থাকলেও রোপণ হয়েছে মাত্র ৬ লাখ ২০ হাজার গাছ, যা প্রয়োজনের তুলনায় কম।গত ১৩ অক্টোবর কক্সবাজারের চুনতি বন্য প্রাণী অভয়ারণ্যে একটি বাচ্চা হাতি ট্রেনের ধাক্কায় মারা যায়। ট্রেনচালক জামাল উদ্দিনের দাবি, নির্ধারিত গতির চেয়ে কম গতিতে ট্রেন চালানোর পরেও দুর্ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি রেলওয়ের গাফিলতির ফল বলে মনে করছেন পরিবেশবিদরা।রেললাইনের কারণে বর্ষাকালে পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটছে। ২০২৩ সালে দুইবার রেললাইনে পাহাড় ধসের কারণে ট্রেন চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ ছিল। এসব ঘটনা পরিবেশগত ঝুঁকির ইঙ্গিত দেয়।চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বন ও পরিবেশবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের সাবেক অধ্যাপক মো. কামাল হোসাইন বলেন, “উন্নয়নকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে পরিবেশ উপেক্ষা করা হয়েছে। তবে এখনো শর্তগুলো পূরণ করলে পরিবেশের ক্ষতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব।”কক্সবাজার রেলপথ প্রকল্পে পরিবেশ সংরক্ষণের শর্তগুলো উপেক্ষা করার কারণে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সরকারের উচিত শর্তগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করে পরিবেশের ক্ষতি কমানোর উদ্যোগ নেওয়া। পাশাপাশি ভবিষ্যতের প্রকল্পগুলোতে পরিবেশের গুরুত্বকে অগ্রাধিকার দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা।