বিচার বিভাগ সংস্কারে ১২ দফা প্রস্তাব
বিচার বিভাগকে স্বাধীন ও জনবান্ধব করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিসের তরুণ বিচারকদের সংগঠন ‘ইয়াং জাজেস ফর জুডিসিয়াল রিফর্ম’ ১২ দফা প্রস্তাব চূড়ান্ত করেছে।
‘ইয়াং জাজেস ফর জুডিসিয়াল রিফর্ম’ জানিয়েছে, তারা ১২ দফা প্রস্তাব নিয়ে প্রধান বিচারপতি ও আইন উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।
প্রস্তাবগুলো হলো-
১. জেলা পর্যায়ের আদালতগুলোর নিয়ন্ত্রণ ও তদারকির জন্য সুপ্রিম কোর্টের অধীনে পৃথক ‘সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয়’ গঠন এবং মাসদার হোসেন মামলার সব নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে হবে।
২. বিচার বিভাগের সামগ্রিক আর্থিক স্বাধীনতা এবং প্রত্যেক আদালতের আর্থিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। এ লক্ষ্যে বিচার বিভাগের বাজেট সংক্রান্ত বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়ার পাশাপাশি প্রত্যেক আদালতের অনুকূলে পৃথক বাজেট বরাদ্দ দিতে হবে।
৩. বিচারকদের পদায়ন ও বদলি সংক্রান্ত একটি ন্যায্য ও গ্রহণযোগ্য নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।
৪. বিভিন্ন আইনে উল্লিখিত আদালত ও ট্রাইব্যুনালগুলোর জন্য বিচারক ও সহায়ক কর্মচারীর পদসহ পৃথক আদালত সৃজন করতে হবে এবং দেশের জনসংখ্যা ও মামলার সংখ্যা অনুপাতে বিচারকদের সংখ্যা যুক্তিসংগত হারে বৃদ্ধি করতে হবে।
৫. বিচারকদের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা বৃদ্ধিসহ পৃথক আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে এবং বিচারিক কর্মঘণ্টার পূর্ণ ব্যবহারে এজলাস সংকট নিরসনে আধুনিক সুযোগ সুবিধাযুক্ত অবকাঠামোর উন্নয়ন করতে হবে।
৬. পর্যাপ্ত সংখ্যক দক্ষ সহায়ক কর্মচারী নিয়োগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জেলা পর্যায়ের আদালতগুলোর দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীদের নিয়োগ বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের আওতায় আনতে হবে।
৭. উচ্চ আদালত ও জেলা আদালতে সরকারি মামলা পরিচালনায় শৃঙ্খলা আনয়ন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস প্রবর্তন করতে হবে এবং জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে সরকারি আইন কর্মকর্তা (জিপি/পিপি) নিয়োগ প্রদান করতে হবে।
৮. বিদ্যমান মামলা-জট নিরসন ও মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে দেওয়ানি ও ফৌজদারি কার্যবিধিসহ সংশ্লিষ্ট আইনগুলোতে প্রয়োজনীয় সংশোধন আনতে হবে।
৯. স্বাধীন বিচার বিভাগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও স্বার্থ সংশ্লিষ্ট উচ্চ আদালতে বিচারাধীন মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করার উদ্যোগ নিতে হবে।
১০. ফৌজদারি মামলায় স্বচ্ছ-নিরপেক্ষ তদন্ত ও কম সময়ের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তির স্বার্থে বিচার বিভাগের নিয়ন্ত্রণে বিশেষায়িত তদন্তকারী সংস্থা এবং আদালত ও বিচারকদের নিরাপত্তাসহ আদালতের আদেশ কার্যকর করার উদ্দেশ্যে বিচার বিভাগের অধীনে বিশেষ ফোর্স গঠন করতে হবে।
১১. ন্যায়বিচারে প্রবেশাধিকার সহজ করা ও জনসাধারণের দোরগোড়ায় বিচারিক সেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে প্রতিটি উপজেলার জন্য পৃথক পৃথক আদালত নিশ্চিত করতে হবে এবং নতুন উপজেলা সৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় সুবিধাসহ একটি করে দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালত স্থাপন করতে হবে।
১২. বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও মর্যাদা সমুন্নত রাখা এবং বিচারকদের বক্তব্য ও দাবি-দাওয়া নিয়মতান্ত্রিকভাবে উপস্থাপন করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনকে সংস্কার করে সব বিচারকের জন্য উন্মুক্ত, গণতান্ত্রিক ও বৈষম্যহীন হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে হবে।