পশ্চিমবঙ্গজুড়ে বিক্ষোভ, অপরাধীদের দ্রুত কঠোর শাস্তির বার্তা মোদির

সময়: 6:44 am - August 15, 2024 | | পঠিত হয়েছে: 67 বার

পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার আরজি কর হাসপাতালে নারী চিকিৎসককে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় তোলপাড় ভারত। তরুণী চিকিৎসককে খুন ও ধর্ষণের ঘটনায় সারা দেশের ডাক্তারসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রতিবাদ তুঙ্গে উঠেছে। এ পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নারী নির্যাতন-ধর্ষণের মতো অপরাধে দোষীদের দ্রুত শাস্তি দেওয়ার কথা জানান। এ ধরনের অপরাধ দমনে গুরুত্ব দিয়ে বিচার করার কথা জানিয়েছেন তিনি।মোদি বলেন, ‘লালকেল্লা থেকে আরো একবার আমি দুঃখ প্রকাশ করতে চাই। নারীদের ওপর যে নির্যাতন চলছে, গুরুত্ব সহকারে তা নিয়ে ভাবা দরকার। এ নিয়ে দেশজুড়ে ক্ষোভ তৈরি হচ্ছে।’ তিনি রাজ্য সরকারগুলোর প্রতি বার্তা দিয়ে মোদি বলেন, ‘দেশ, সমাজ, রাজ্য় সরকারের উচিত এটা নিয়ে ভাবা।যারা নারীদের ওপর অত্যাচার করছে, তাদের যত দ্রুত সম্ভব তাদের বিচার করে কঠোর সাজা দিতে হবে। তবেই সমাজের প্রতি নারীদের বিশ্বাস ফিরবে।’তিনি আক্ষেপ করে জানান, ‘যখন ধর্ষণ বা নারীদের ওপর নির্যাতনের ঘটনা ঘটে, তা ফলাও করে প্রচার পায়। কিন্তু অপরাধীদের সাজা পাওয়ার খবর প্রচার পায় না।শাস্তির কথাও জানাতে হবে যাতে সবাই জানতে পারে যে, এই ধরনের অপরাধ করলে ফাঁসি পর্যন্ত হতে পারে। তাহলে মানুষ ভয় পাবে। এই ভয়ের আবহ তৈরি হওয়া দরকার।’এদিকে ধর্ষণ ও খুনের প্রতিবাদে গদতাল বুধবার রাতে শান্তিপূর্ণ জমায়েতের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়ে শুক্রবার অনশনে বসবে দেশটির চিকিৎসকরা।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ১৩৮ বছরের পুরোনো আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের এক চিকিৎসককে ধর্ষণের পর হত্যা ভারতজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। গতকাল বুধবার এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে স্বাধীনতার রাতে মেয়েদের রাত দখলের ডাক দেওয়া হয়েছিল। ‘মেয়েরা রাত দখল করো’ নামের এই বিক্ষোভ কর্মসূচি ভারতজুড়ে পালন করার ঘোষণা দেন বিক্ষোভকারীরা। ইতোমধ্যে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে এই আন্দোলনের সমর্থনে বিক্ষোভ-সমাবেশ শুরু হয়েছে।

সেই অনুসারে আন্দোলনের মূল স্থল আর জি কর হাসপাতালে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চলছিল। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে হঠাৎ দুষ্কৃতীকারীরা প্রায় ৪০ মিনিট তাণ্ডব চালায়। বেধড়ক মারধর করা হয় কর্মবিরতিতে অংশ নেওয়া চিকিৎসকদের।

উল্লেখ্য, ২১টি হাসপাতালের চিকিৎসকরা ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় রাজ্যজুড়ে কর্মবিরতি পালনের ডাক দিয়েছিল। এর মধ্যে কলকাতার সব মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল তো রয়েছেই, রাজধানী নয়াদিল্লি ও মুম্বাই শহর এবং কর্ণাটক ও উত্তর প্রদেশ রাজ্যেও বিক্ষোভ করেছেন চিকিৎসকরা। জরুরি পরিষেবা ছাড়া কোনো সেবা দেননি চিকিৎসকরা। তবে কিছু কিছু হাসপাতালে রোগীদের সমস্যার কথা মাথায় রেখে কর্মবিরতিতে রাশ টানা হয়েছে।

বুধবার রাতের হামলায় ভেঙে দেওয়া হয়েছে অস্থায়ী মঞ্চ, চেয়ার,টেবিল, পাখা। হাসপাতালের জরুরী বিভাগের একাধিক রুম ভাঙচুর করা হয়। এ ঘটনায় জরুরী পরিষেবা দেওয়ার মতো অবস্থা না থাকায় ট্রমা কেয়ারে ইমারজেন্সি চলবে বলে জানিয়েছেন আর জি কর হাসপাতালের অধ্যক্ষ চিকিৎসক সুহৃতা পাল। পুলিশ আচমকা এই আক্রমণ সামলাতে হিমশিম খায়। প্রচুর ফোর্স পাঠানোর নির্দেষ দেওয়া হয় এবং হামলাকারীদের সামলাতে কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে পুলিশ।

এই ভাঙচুরের পেছনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘আক্রোশপূর্ণ প্রচারণাকে’ দায়ী করেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার ভিনেত গয়াল। তিনি বলেন, ‘এখানে যা ঘটেছে, সেটা ভুল প্রচারণার কারণে। এটা আক্রোশপূর্ণ…কলকাতা পুলিশ কী করেনি? এ ঘটনায় সবকিছুই করা হয়েছে। আমরা ভুক্তভোগীর পরিবারকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু নানা গুজব ছড়িয়েছে…এসবে আমি খুবই রাগান্বিত। আমরা কোনো ভুল করিনি।’

পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও ভারতের বিভিন্ন জায়গায় ‘রাতের দখল নাও’ কর্মসূচি পালন করেন নারীরা। বিচারের দাবিতে রাত ১২টার আগেই শুরু হয় নারীদের মিছিল। এদিকে হামলার ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে শুক্রবার ১২ ঘণ্টার সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে।

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর