যে সকল কারণে জিততে পারেন কমলা অথবা ট্রাম্প ।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আজ। এবারের নির্বাচনে মূল লড়াই রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের মধ্যে। নির্বাচনের এক দিন আগে পর্যন্ত সুইং স্টেট বা দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোতে দুই প্রার্থীর জনসমর্থন বলা চলে সমানে সমান। সাত সুইং স্টেটেই ভাগ্য নির্ধারিত হবে তাদের। জরিপগুলো বলছে, দুই প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে চলেছে। তবে ট্রাম্প বা কমলার জয়ী হওয়ার বেশ কিছু কারণও রয়েছে।
কেন ট্রাম্প জিততে পারেন? বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—প্রথমত, ট্রাম্প এখন ক্ষমতায় নেই। অর্থনীতি মার্কিন ভোটারদের কাছে এক নম্বর ইস্যু। বেশির ভাগ আমেরিকান বলছেন, তারা নিত্যদিন উচ্চ দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে লড়ছেন। ১৯৭০-এর দশকের পর এখনকার মতো মূল্যস্ফীতি দেখা যায়নি। যে কারণে ট্রাম্প ভোটারদের প্রশ্ন করতেই পারেন—আপনারা কি চার বছর আগের চেয়ে এখন ভালো আছেন? উচ্চ দ্রব্যমূল্যের কারণে ২০২৪ সালে অনেক দেশে ভোটাররা ক্ষমতাসীন দলকে ছুড়ে ফেলেছে। মার্কিন ভোটাররাও পরিবর্তনের জন্য মুখিয়ে আছে বলে মনে হচ্ছে। আমেরিকানদের মাত্র এক-চতুর্থাংশ বলেছেন, দেশ যেদিকে যাচ্ছে তাতে তারা সন্তুষ্ট এবং দুই-তৃতীয়াংশের অর্থনীতির বিষয়ে দৃষ্টিভঙ্গি খারাপ। কমলা হ্যারিস তথাকথিত পরিবর্তনের প্রার্থী হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। যদিও তিনি অজনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ভাইস প্রেসিডেন্ট।
দ্বিতীয়ত, ট্রাম্প জিততে পারেন—কারণ খারাপ খবরের মধ্যেও তিনি অভেদ্য। ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিল ভবনে দাঙ্গা, একের পর এক অভিযোগে অভিযুক্ত, এমনকি সাবেক প্রেসিডেন্ট হিসেবে নজিরবিহীনভাবে ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পরও তার প্রতি জনসমর্থন গত কয়েক বছরে ৪০ শতাংশ বা তার ওপরে ছিল। ডেমোক্র্যাট ও বিরোধীরা ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট হওয়ার অযোগ্য দাবি করলেও বেশির ভাগ রিপাবলিকান ট্রাম্পের মতো বিশ্বাস করে যে, তিনি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার।
তৃতীয়ত, ট্রাম্প জিততে পারেন তার অভিবাসনবিরোধী অবস্থানের জন্য। অর্থনীতির বাইরে, নির্বাচন প্রায়ই একটি আবেগতাড়িত ইস্যুতে নিয়ন্ত্রিত হয়। এক্ষেত্রে ডেমোক্র্যাটরা সামনে এনেছে গর্ভপাত ইস্যু, আর ট্রাম্প বাজি ধরছেন অভিবাসন ইস্যুতে। জরিপগুলো বলছে, অভিবাসন নিয়ন্ত্রণের ইস্যুতে ট্রাম্পেই ভোটারদের আস্থা বেশি।
চতুর্থত, ট্রাম্প জিততে পারেন যদি তিনি সুইং স্টেটগুলোতে গ্রামীণ এবং শহরতলির অংশগুলোতে ভোটারদের সংখ্যা বাড়াতে পারেন। আর পঞ্চমত, ট্রাম্প জিততে পারেন, কারণ তাকে বর্তমান অস্থিতিশীল বিশ্বে একজন শক্ত নেতা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। ট্রাম্পের বিরোধিতাকারীরা বলছেন যে, তিনি কর্তৃত্ববাদী নেতাদের সঙ্গে মিলে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র জোটকে দুর্বল করেছেন। তবে ট্রাম্প নিজের ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ মনোভাবকে একটি শক্তি হিসেবে দেখেন এবং উল্লেখ করেছেন যে তিনি হোয়াইট হাউজে থাকাকালে কোনো বড় যুদ্ধ শুরু হয়নি। অনেক আমেরিকান ইউক্রেন এবং ইসরাইলে যুক্তরাষ্ট্রের বিলিয়ন বিলিয়ন পাঠানোর কারণে অনেকে ক্ষুব্ধ। তারা মনে করেন বাইডেনের অধীনে যুক্তরাষ্ট্র দুর্বল হয়েছে। যে কারণে অনেক পুরুষ ভোটার ট্রাম্পকে কমলার চেয়ে শক্তিশালী নেতা হিসেবে দেখেন। এসব কারণে শেষ পর্যন্ত ট্রাম্প জয়ী হলে গত ১৩০ বছরে প্রথম বারের মতো কোনো পরাজিত প্রেসিডেন্ট দ্বিতীয় বার প্রেসিডেন্ট হবেন।
অন্যদিকে কমলা হ্যারিসেরও জেতার বেশ কিছু কারণ রয়েছে। বিবিসির খবর অনুযায়ী প্রথমত, কমলা জিততে পারেন কারণ তিনি ট্রাম্প নন। ট্রামেপর কিছু সুবিধা থাকা সত্ত্বেও, তিনি গভীরভাবে মেরুকরণকারী ব্যক্তিত্ব। ২০২০ সালে তিনি রিপাবলিকান প্রার্থী হিসেবে রেকর্ডসংখ্যক ভোট পেয়েছিলেন কিন্তু পরাজিত হন। কারণ তার চেয়ে ৭০ লাখ বেশি মার্কিনি বাইডেনকে ভোট দিয়েছিলেন। এখন কমলা ট্রাম্পের প্রত্যার্পণের ভীতির কার্ড খেলছেন। তিনি ট্রাম্পকে ফ্যাসিবাদী এবং গণতন্ত্রের জন্য হুমকি বলে অভিহিত করেছেন। গত জুলাইতে রয়টার্স/ইপসোস-এর এক জরিপ ইঙ্গিত দেয় যে, পাঁচ জনের মধ্যে চার জন মার্কিনী অনুভব করেছেন যে, দেশটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। কমলা আশা করবেন ভোটাররা, বিশেষ করে মধ্যপন্থি রিপাবলিকান এবং স্বতন্ত্ররা তাকে স্থিতিশীলতার প্রার্থী হিসেবে দেখবেন।
দ্বিতীয়ত, হ্যারিস জিততে পারেন কারণ তিনি জো বাইডেন নন। অপ্রত্যাশিতভাবে বাইডেন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর সময় মনে হয়েছিল ডেমোক্র্যাটরা নিশ্চিত পরাজয়ের মুখে পড়েছে। ট্রাম্পকে হারাতে দলটি দ্রুত ঐক্যবদ্ধভাবে কমলার পাশে দাঁড়ায়। রিপাবলিকানরা কমলাকে বাইডেনের কিছু অজনপ্রিয় নীতির সঙ্গে যুক্ত করেছে, কিন্তু কমলা নিজেকে বাইডেনের থেকে আলাদা হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। জো বাইডেনের বয়স নিয়ে ভোটারদের মধ্যে উদ্বেগ ছিল, কিন্তু এখন ট্রাম্প সবচেয়ে বেশি বয়সে প্রেসিডেন্ট হতে লড়ছেন।
তৃতীয়ত, কমলা জিততে পারেন, কারণ তিনি নারী অধিকারের ‘চ্যাম্পিয়ন’। যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট রো ভি ওয়েড এবং গর্ভপাতের সাংবিধানিক অধিকার বাতিল করার পর এটিই প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। গর্ভপাতের অধিকার রক্ষার বিষয়ে উদ্বিগ্ন ভোটাররা কমলা হ্যারিসকে অবিচলভাবে সমর্থন করে। ২০২২ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচন বিশ্লেষণে দেখা গেছে যে, এই ইস্যুটি ভোটারের সংখ্যা বাড়াতে পারে এবং ফলাফলের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। কমলা প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে ইতিহাস গড়বেন এবং এ বিষয়টি নারী ভোটারদের মধ্যে প্রভাব ফেলতে পারে।
আর চতুর্থত, কমলা জিততে পারেন, কারণ তিনি ট্রাম্পের চেয়ে বেশি তহবিল সংগ্রহ ও খরচ করেছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন যে খুবই ব্যয়বহুল সেটা কোনো গোপন বিষয় নয়। এবারের নির্বাচনটি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যয়বহুল নির্বাচন হওয়ার পথে রয়েছে। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত ট্রাম্প যে পরিমাণ তহবিল সংগ্রহ করেছেন, গত জুলাই থেকে এখন পর্যন্ত তার চেয়ে বেশি তহবিল পেয়েছেন কমলা। এসব তহবিলের বেশির ভাগই ব্যয় করা হচ্ছে সুইং স্টেটগুলোতে বিজ্ঞাপন দিয়ে। যা নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে।