ইসরায়েলি হামলায় হিজবুল্লাহর ডেপুটি কমান্ডারের মৃত্যু ।
ইসরায়েলের বিমানবাহিনীর (আইএএফ) অভিযানে সশস্ত্র ইসলামি রাজনৈতিক গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর ডেপুটি কমান্ডার নাসের আবেদ আল আজিজ রশিদ নিহত হয়েছেন। শনিবার (১৯ অক্টোবর) ভোরে দক্ষিণ লেবানেনে বিন্ত জেবেইল এলাকায় তিনি নিহত হন। আইডিএফের এক বিবৃতির বরাত দিয়ে দ্য জেরুজালেম পোস্ট এ তথ্য জানিয়েছে।
বিবৃতিতে আইডিএফ জানিয়েছে, নাসের আবেদ আল আজিজ রশিদ ছিলেন হিজবুল্লাহর বিন্ত জেবেইল শাখার সামরিক বিভাগের একজন শীর্ষ কমান্ডার।
ডেপুটি কমান্ডার হলেও বিন্ত জেবেইল শাখার সামরিক বিভাগের মূল নেতৃত্বে তিনিই ছিলেন। গত এক বছরে বিন্ত জেবেইল থেকে ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে বেশ কিছু হামলা চালানো হয়েছে। সেসব হামলার নেতৃত্বে ছিলেন এই নাসের আবেদ।
তবে এই অভিযানে নাসের আবেদ ছাড়া হিজবুল্লাহর আরো কোনো কমান্ডার বা যোদ্ধা নিহত হয়েছেন কি না, সে সম্পর্কে বিবৃতিতে কিছু বলেনি আইডিএফ।
তবে বিন্ত জেবেল এলাকায় দলটির কয়েকটি সামরিক স্থাপনা ও অস্ত্রাগার ধ্বংস করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
গণমাধ্যমটি জানিয়েছে, গত ২০ সেপ্টেম্বর থেকে লেবাননে অভিযান শুরু করে ইসরায়েলের বিমানবাহিনী। প্রায় ১০ দিনের সেই অভিযানে নিহত হয়েছেন হিজবুল্লাহর প্রধান নেতা ও সেক্রেটারি জেনারেল হাসান নাসরুল্লাহসহ বেশ কয়েকজন শীর্ষ কমান্ডার। এতে গোষ্ঠীটির চেইন অব কমান্ডের সর্বোচ্চ স্তর প্রায় ভেঙে পড়েছে।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে দক্ষিণ লেবাননে অভিযান শুরু করেছে আইডিএফের স্থলবাহিনী। এর আগে এক বিজ্ঞপ্তিতে আইডিএফ বলেছিল, ইসরায়েলের সীমান্তবর্তী দক্ষিণ লেবাননের গ্রামগুলোতে সীমিত ও স্থানীয় পর্যায়ে অভিযান চালানো হবে। তবে কত দিন এ অভিযান চলবে, সে সম্পর্কিত কোনো তথ্য বা ইঙ্গিত এখনো দেয়নি আইডিএফ।
দ্য জেরুজালেম পোস্টের তথ্য মতে, ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানে ইতোমধ্যে লেবাননে বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র সরে যেতে বাধ্য হয়েছে ৬০ হাজারেরও বেশি মানুষ।
শনিবারের বিবৃতিতে আইডিএফ জানিয়েছে, দক্ষিণ লেবাননে গত প্রায় এক মাসের অভিযানে হিজবুল্লাহর ১২০টিরও বেশি সামরিক স্থাপনা, বেশ কিছু সুড়ঙ্গ এবং ২০টি অস্ত্রাগার ধ্বংস করেছে ইসরায়েলের বিমানবাহিনী।
উল্লেখ্য, ইরানের সমর্থন ও মদদপুষ্ট হিজবুল্লাহ বর্তমানে বিশ্বের বৃহত্তম সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী। লেবাননভিত্তিক এই গোষ্ঠীটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৮৫ সালে। প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই গোষ্ঠীটি ইসরায়েল রাষ্ট্রকে ধ্বংসের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
সংবাদমাধ্যমটির তথ্য মতে, ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্তের অন্য পাশেই লেবাননের দক্ষিণাঞ্চল। এ অঞ্চলটি হিজবুল্লাহর প্রধান ঘাঁটি এবং গোষ্ঠীটির অধিকাংশ সামরিক স্থাপনার এখানে অবস্থিত। গত ৭ অক্টোবর গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরুর পর হামাসের প্রতি সংহতি জানিয়ে ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলীয় বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া শুরু করে হিজবুল্লাহ। পাল্টা জবাব দেওয়া শুরু করে ইসরায়েলও।
গত এক বছরে উভয় পক্ষের সংঘর্ষে লেবাননে প্রাণ হারিয়েছে ২ হাজারেরও বেশি মানুষ। নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যা পাঁচ শতাধিক। তবে আইডিএফের দাবি, নিহতদের মধ্যে ৯৪০ জন হিজবুল্লাহ কমান্ডার ও যোদ্ধা রয়েছে।