চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলকে এখনই এবং ৩০ দিনের মধ্যে সাহায্য সরবরাহ বাড়ানোর জন্য কয়েকটি দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে।
ইসরায়েলকে ৩০ দিনের সময় দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ।
গাজায় মানবিক সহায়তার প্রবেশাধিকার বাড়ানোর জন্য বা সামরিক সহায়তার ঝুঁকি কমাতে ইসরায়েলকে ৩০ দিনের সময় দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ সক্রান্ত যুক্তরাষ্ট্রের একটি চিঠি ইসরায়েলকে পাঠানো হয়েছে বলে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত রবিবার (১২ অক্টোবর) চিঠিটি পাঠানো হয়। চিঠিটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে তার মিত্রকে সর্বচ্চো সর্তকতা দিয়ে লেখা হয়েছে এবং উত্তর গাজায় নতুন করে ইসরায়েলি আক্রমণে বিপুল সংখ্যক বেসামরিক হতাহতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
চিঠিতে আরো বলা হয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ক্রমবর্ধমান মানবিক পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বিগ্ন। ইসরায়েল গত মাসে উত্তর ও দক্ষিণের মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ মানবিক সহায়তা প্রদানে বাধা দিয়েছে।
ইসরায়েল সরকারের কাছে পাঠানো মার্কিন চিঠির বিষয়বস্তু স্টেট ডিপার্টমেন্ট প্রকাশ করেছে। চিঠিতে স্টেট সেক্রেটারি অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এবং প্রতিরক্ষা সেক্রেটারি লয়েড অস্টিনের সই রয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘গাজার মানবিক পরিস্থিতির দিনে দিনে অবনতির দিকে যাচ্ছে। এ নিয়ে মার্কিন সরকার গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। ইসরায়েলকে সতর্ক করার জন্য চিঠিটি দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় এই মাসে আপনার সরকারের কাছ থেকে জরুরি এবং টেকসই পদক্ষেপ চাই।
এতে ব্যর্থ হলে মার্কিন নীতিতে প্রভাব পড়তে পারে।’ চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘মার্কিন মানবিক সহায়তা প্রদানে বাধা সৃষ্টিকারী দেশগুলোতে সামরিক সহায়তা নিষিদ্ধ করতে পারে।’
ইসরায়েলকে শীতের আগে গাজাজুড়ে সকল ধরণের মানবিক সহায়তা বাড়াতে হবে বলে চিঠিতে বলা হয়েছে। যার মধ্যে চারটি প্রধান ক্রসিং এবং একটি নতুন পঞ্চম ক্রসিং দিয়ে ন্যূনতম ৩৫০টি লরি যেন যেতে পারে এমন ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে। সেইসঙ্গে আল-মাওয়াসিতে লোকদের ঢোকার অনুমতি দিতে হবে। চিঠিতে ইসরায়েলকে উত্তর থেকে দক্ষিণে বেসামরিকদের জোরপূর্বক সরিয়ে না নেওয়ার এবং উত্তর গাজার বিচ্ছিন্নতা শেষ করার আহবান জানানো হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার ওয়াশিংটনে এক সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার সাংবাদিকদের বলেন, চিঠিটি একটি ব্যক্তিগত কূটনৈতিক যোগাযোগ, যা আমরা প্রকাশ করতে চাইনি। মিলার মানবিক সহায়তার প্রবেশাধিকার না বাড়ালে ইসরায়েলের জন্য কী পরিণতি হতে পারে, সে সম্পর্কে কিছু বলেননি।
কিন্তু তিনি উল্লেখ করেছেন, ‘মার্কিন সামরিক সহায়তা যারা পায় তারা মার্কিন মানবিক সহায়তার বিধানকে বাধা দেয় না। এটা শুধু আইন এবং আমরা অবশ্যই আইন মেনে চলব। তবে আমাদের আশা হল ইসরায়েল সেই পরিবর্তনগেুলো করবে, যে রূপরেখা আমরা দিয়েছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘৩০ দিনের সময়সীমা ৫ নভেম্বর আসন্ন মার্কিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সঙ্গে যুক্ত নয়।’
ইসরায়েল চিঠিটি পর্যালোচনা করছে বলে একজন ইসরায়েলি কর্মকর্তা জানিয়েছেন। তারা ‘এই বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে নিয়েছে’ এবং মার্কিন প্রতিপক্ষের সঙ্গে ‘উত্থাপিত উদ্বেগের সমাধান’ করতে চান বলেও জানান তিনি।
ইসরায়েল এর আগে জানায়, তারা উত্তরে হামাস কর্মীদের লক্ষ্যবস্তু করলেও মানবিক সাহায্য প্রবেশে বাধা দেয়নি। গত সোমবার (১৩ অক্টোবর) বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির সাহায্য বহনকারী ৩০টি লরি ইরেজ ক্রসিং দিয়ে উত্তর গাজায় প্রবেশ করেছে বলে ইসরায়েলি সামরিক সংস্থা কোগাট জানিয়েছে। এই সরবরাহ দুই-সপ্তাহ ধরে চলে। কিন্তু জাতিসংঘ বলেছে, গাজার উত্তরে কোনো ধরনের খাদ্য সহায়তা বিতরণ করা যায়নি এবং সেখানে ৪ লাখ ফিলিস্তিনিদের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় সরবরাহ শেষ হয়ে গেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উদ্বেগের কথা বললেও এখন পর্যন্ত ইসরায়েলকে সবচেয়ে বড় পরিমানে অস্ত্র সরবরাহ করেছে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গত এক বছরে গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালাতে মার্কিন সরবরাহকৃত বিমান, বোমা, ক্ষেপণাস্ত্র এবং গোলার ওপরই নির্ভরশীল।
ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অফ রেড ক্রস (আইসিআরসি) সতর্ক করে জানিয়েছে, উত্তর গাজার পরিবারগুলো ইসরায়েলি আক্রমণের কারণে অকল্পনীয় ভয়, প্রিয়জন হারানোর বেদনা, বিভ্রান্তি এবং ক্লান্তির সম্মুখীন।
জাতিসংঘ বলছে, প্রায় ৫০ হাজার মানুষ গাজা শহর ও উত্তরাঞ্চলের অন্যান্য অংশে পালিয়ে গেছে। কিন্তু অনেকের জন্য তাদের বাড়ি ছেড়ে যেতে পারছে না। তারা অনেকে অসুস্থ বা অক্ষম। হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, গাজায় এখন পর্যন্ত ৪২ হাজার ৩৪০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।