ডিমের বাজার অস্থিরতা ।

সময়: 8:59 am - October 15, 2024 | | পঠিত হয়েছে: 44 বার

ডিমের বাড়তি দামের ধাক্কা সামাল দেওয়ার আগেই সরবরাহ প্রক্রিয়ায় আরেক সংকট দেখা দিয়েছে। বাজারে বাজারে অভিযান ও ব্যবসায়ীদের জরিমানার মুখে দু’দিন ধরে ডিম বেচাকেনা বন্ধই করে দিয়েছেন রাজধানীর তেজগাঁওসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা। ফলে খুচরা বাজারে ডিমের সংকট দেখা দিয়েছে। এ কারণে অনেক ক্রেতা ডিম কিনতে গিয়ে খালি হাতে ফিরছেন। এরই মধ্যে খুচরা বাজারে ডজনে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়ে ১৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে ডিম; যা দু-তিন দিন আগেও ছিল ১৬৫-১৭০ টাকা।

খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, আড়তে নেই, তাই তারা ডিম কিনতে পারছেন না। আর পাইকাররা বলছেন, খামার পর্যায়ে ডিমের দাম বেশি। ডিলার পর্যায়ে ডিমের অস্বাভাবিক দর বেড়ে যাওয়ায় তারা ডিম সংগ্রহ ও বিক্রি বন্ধ রেখেছেন।তেজগাঁও ও কাপ্তান বাজারের কয়েকজন ডিমের আড়তদার, ডিম আনা-নেওয়া করে এমন কয়েকজন ট্রাকচালক ও কয়েকজন খুচরা ব্যবসায়ী তাদের নাম পরিচয় গোপন রাখার শর্তে জানান, ডিমের দর নয়ছয়ের পেছনে কলকাঠি নাড়ছেন টাঙ্গাইলের ডিলাররা।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তর গত ১৬ সেপ্টেম্বর প্রতিটি ডিমের দাম উৎপাদন পর্যায়ে ১০.৫৮ টাকা, পাইকারি পর্যায়ে ১১.১০ টাকা ও খুচরা পর্যায়ে ১১.৮৭ টাকা বেঁধে দেয়। সে হিসাবে প্রতি ডজন বাদামি ডিমের দাম ১৪৩ টাকার বেশি হওয়ার সুযোগ নেই।

তেজগাঁওয়ের ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে তাদের ডিম কিনতে হচ্ছে। তবে কেনা দামের ভিত্তিতে তা বিক্রি করতে পারছেন না। সরকার নির্ধারিত দাম নিশ্চিত করতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে। তাই অধিদপ্তরের অভিযান ও জরিমানার ভয়ে তারা মুরগির ডিম বিক্রি বন্ধ রেখেছেন। ফলে গত রোববার রাতে তেজগাঁওয়ে ডিমের কোনো গাড়ি আসেনি; বেচাকেনাও হয়নি।

গতকাল সোমবার সরেজমিন দেখা গেছে, কারওয়ান বাজারে বেশিরভাগ খুচরা ব্যবসায়ী দোকান বন্ধ রেখেছেন। দু-একজনের কাছে ডিম দেখা গেলেও তা পরিমাণে ছিল কম। এছাড়া হাতিরপুল ও তেজকুনিপাড়া এলাকায় গিয়ে জানা গেছে, বেশির ভাগ দোকানে ডিমের সংকট রয়েছে। এসব এলাকায় প্রতি ডজন বাদামি ডিম বিক্রি হয়েছে ১৮০ থেকে ১৮৫ টাকায়। সাদা ডিম বিক্রি হয়েছে ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকা দরে।
সরকার নির্ধারিত দামে ডিম কেনাবেচা করতে না পারায় চট্টগ্রামেও আড়ত বন্ধ রেখেছে ব্যবসায়ীরা। গতকাল সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নগরের পাহাড়তলীতে ডিমের আড়তগুলো বন্ধ ছিল। সন্ধ্যার পর আড়ত খোলেছে।

জানা গেছে, টাঙ্গাইলের আশপাশের এলাকার খামার থেকে সব ডিম আসে টাঙ্গাইলে। সেখানে প্রতিদিনই দর নির্ধারণ করেন ডিলাররা। দাম ওঠানামা করে তাদের মতে। কারণ চাইলেও কোনো পাইকারি ব্যবসায়ী সরাসরি খামারির কাছ থেকে ডিম কিনতে পারবেন না। এর পেছনে কিছু কারণও আছে। পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো ও বড় ডিলাররা খামারিদের খাদ্য সরবরাহ করে। খাদ্যের দাম অনুযায়ী তারা ডিমের মূল্য দেয় খামারিদের। ফলে খামারিরা চাইলেও ডিলাররা তাদের নির্ধারিত দরের চেয়ে বেশি দর দেন না খামারিদের। খামারি এবং ডিলারদের মধ্যে চুক্তি অনুযায়ী, খামারিরা শুধু ডিলারকেই ডিম সরবরাহ করতে পারবে। ফলে মূল কারসাজির সঙ্গে জড়িত ডিলাররা।

পাইকারি ও খুচরা ডিম ব্যবসায়ীরা বলেন, সরকারের সংস্থাগুলো বাজার তদারকের জন্যই শুধু খুচরা বাজারে ও আড়তে আসে। সেখানে ব্যবসায়ীদের নানাভাবে জরিমানা ও হয়রানি করা হয়। অথচ দর বাড়ানোর পেছনে তাদের কোনো ভূমিকা নেই। ডিলার ও করপোরেট পর্যায়ে যারা দাম বাড়ান, তারা অনেক উঁচুতে। তবে সরকারের কোনো সংস্থা সেসব পর্যায়ে তদারকি করছে না। তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। এমনকি যেখানে বেচাকেনা করেন তার থেকে অনেক দূরে ডিম রাখেন। যাতে তাদের কাছে কী পরিমাণ ডিম আছে তা পাইকার বা কোনো সংস্থার লোকজন জানতে পারে না। টাঙ্গাইলের এমন কিছু এলাকায় ডিম বেচাকেনা হয়, যেখানে সন্ধ্যার পর সাধারণ মানুষও যেতে ভয় পান। ডিলার ও করপোরেট পর্যায়ে এবং খামারির সঙ্গে তদারকি ও আলোচনা করলে সরকার অনেক তথ্য পাবে। এসব জায়গায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হলে দু’দিনেই ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।

কেউ কেউ বলছেন, উৎপাদনকারী ও ব্যবসায়ীর সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই  দর নির্ধারণ করেছে সরকার। উৎপাদন না বাড়িয়ে দর বেঁধে দিলে তা বাস্তবায়ন হবে না। তাছাড়া, সাম্প্রতিক বন্যায় ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, লক্ষ্মীপুরসহ দেশের পূর্বাঞ্চল তলিয়ে গেছে। হাজার হাজার ফার্মের লাখ লাখ মুরগি মারা গেছে। ফলে ডিমের উৎপাদন কমেছে। তবে চাহিদা কমেনি। বরং বর্ষাকালে ডিমের চাহিদা বেশি থাকে।
তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি আমানত উল্লাহ বলেন, ঢাকায় সবচেয়ে বেশি ডিম আসে টাঙ্গাইল ও এর আশপাশের এলাকা থেকে। সেখানে প্রতি পিস ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১২ টাকা ৬০ পয়সা। সরকার নির্ধারণ করে দিয়েছে ১০ টাকা ৫৮ পয়সা। তাহলে প্রতিটি ডিম আমরা দুই টাকা বেশি দিয়ে কিনে আনলে, দুই টাকা বেশি ধরেই তো বিক্রি করতে হবে। তবে বেশি দরে বিক্রি করলে সরকারি লোকজন অভিযানে এসে ব্যবসায়ীদের হাজার হাজার টাকা জরিমানা করে। সেজন্যই পাইকারি ডিম ব্যবসায়ীরা দু’দিন ধরে ডিম বিক্রি বন্ধ রেখেছেন।
কবে থেকে বিক্রি শুরু হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মঙ্গলবার প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ডিম ব্যবসায়ীদের ডেকেছে। সেখানে কী আলোচনা হয় সেজন্য অপেক্ষা করছি। তারপর ডিম ব্যবসায়ীরা বেচাবিক্রি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর