ফলাফলে দেখা যায়, ২০৪১ সাল নাগাদ এসব সেক্টরের বিভিন্ন পেশায় কর্মরত ৭০ লক্ষাধিক মানুষ চাকরি হারাবেন, আবার নতুন নতুন পেশায় এক কোটি ১০ লক্ষাধিক চাকরির বিশাল সুযোগ তৈরি হবে। ভবিষ্যতের সম্ভাবনাময় উল্লেখযোগ্য পেশাগুলো হলো এআই স্পেশালিস্ট, ব্লকচেইন এক্সপার্ট, থ্রিডি ডিজাইনার, কাস্টমার এক্সপেরিয়েন্স ম্যানেজার, এআর অ্যান্ড ভিআর ডেভেলপার, অটোনমাস ভেহিকল টেকনিশিয়ান, ড্রোন সার্ভেয়ার, সাইবার ফিজিক্যাল কন্ট্রোল সিস্টেম অপারেটর ও রোবট ডক্টর ভার্চুয়াল হোম অ্যাসিস্ট্যান্ট। নতুন এই বাজারের চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বেকার যুবদের জন্য নানা রকম দক্ষতা উন্নয়নমূলক কার্যক্রম শুরু করেছে।
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের কারনে চাকরি হারাতে পারেন ৫৪ লাখ বাংলাদেশি ।
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ফলে বাংলাদেশের প্রায় ৫৪ লাখ কর্মী চাকরি হারাতে পারেন। সরকারি সংস্থা এটুআই এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) গবেষণার এই তথ্য উল্লেখ করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নানা আশঙ্কার পাশাপাশি তৈরি হতে পারে নতুন সম্ভাবনাও।
সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে সরকারের নতুন কৌশলপত্র তৈরি করা দরকার। গত সোমবার আগারগাঁও পর্যটন ভবনে এসএমই ফাউন্ডেশন এবং জার্মান উন্নয়ন সংস্থা ফ্রেডরিক-ইবার্ট-স্টিফটাংগ (এফইএস) বাংলাদেশের উদ্যোগে ‘দ্য ফোর্থ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভল্যুশন : অপরচুনিটিজ অ্যান্ড চ্যালেঞ্জেস ফর এসএমই ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা উঠে আসে।
সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আনোয়ার হোসেন চৌধুরী। প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী এনডিসি। বিশেষ অতিথি ছিলেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. সলিম উল্লাহ। বক্তব্য দেন এফইএস বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি ড. ফেলিক্স গার্ডস।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য-প্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. কাজী মুহাইমিন-উস-সাকিব। মূল প্রবন্ধে সংস্থা এটুআই এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলওর গবেষণার তথ্য উল্লেখ করে আরো বলা হয়, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ফলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের ২৭ লাখ, ফার্নিচার খাতের প্রায় ১৪ লাখ, কৃষিপণ্য ও পর্যটন খাতের ছয় লাখ করে ১২ লাখ এবং চামড়াশিল্পের এক লাখ—মোট ৫৪ লাখ কর্মী চাকরি হারাতে পারেন।
মূল প্রবন্ধে এই তথ্যের সমর্থনে গবেষণা সংস্থা সিপিডি ও পিআরআই-তথ্যও তুলে ধরা হয়। সেই সঙ্গে বলা হয়, দক্ষ কর্মী এবং পর্যাপ্ত অবকাঠামোর অভাবের কারণে এই সংকটে পড়তে পারে দেশের এসএমই খাতও।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি ও কর্মসংস্থান তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার পরও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বা আইসিটি ব্যবহারে এখনো পিছিয়ে দেশের এসএমই খাত। এ অবস্থায় চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নতুন কৌশলপত্র তৈরি হলে এসএমই খাতের পণ্য রপ্তানি, নতুন বিজনেস মডেল তৈরি, এমনকি নতুন কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র তৈরি হতে পারে এসএমই খাতে। সেমিনারে এসএমই উদ্যোক্তা, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তর, এসএমই চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশন, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, গবেষক, অর্থনীতিবিদ এবং সংশ্লিষ্ট অংশীজন অংশগ্রহণ করেন।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রভাব বাংলাদেশেও পড়া শুরু হয়েছে। ২০২৩ সালে এটুআইর উদ্যোগে ১৬টি সেক্টরের ভবিষ্যৎ কর্মসংস্থানের ওপর একটি গবেষণা পরিচালিত হয়।